Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

টমেটো ও বেগুনের রোগ দমনে জোড়কলম প্রযুক্তি

টমেটো ও বেগুনের রোগ দমনে জোড়কলম প্রযুক্তি

ড. বাহাউদ্দিন আহমেদ

বেগুন ও টমেটো বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রধান দুটি সবজি। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বেগুন ও টমেটো চাষের জন্য প্রধান সমস্যা হলো মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ। প্রধানত ঢলেপড়া রোগ ও শিকড়ের গিট রোগ টমেটো ও বেগুন চাষে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। উচ্চ তাপমাত্রা ও মাটিতে বেশি আর্দ্রতা থাকলে এই দুটি রোগ দ্রæত বিস্তার লাভ করে। ঢলে পড়া রোগের জীবাণু হলো Ralstonia Solanacearum নামক একটি ব্যাকটেরিয়া এবং শিকড়ের গিট রোগের জীবাণু হলো Meloidigyne incognita নামক একটি কৃমি বা নেমাটোড। এ দুটি রোগের কারণে বেগুন ও টমেটোর ফলন ৩০-৫০ ভাগ বা তার বেশি কমে যায়। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশে রাসায়নিক বিষ বা অন্য কোন দমন পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগ দুটি সন্তোষজনকভাবে দমন করা এখনো সম্ভব হয়নি। ব্যাপক হারে মাটি শোধন বা মাটি জীবাণুমুক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া এ পদ্ধতি মাটির বিভিন্ন উপকারী জীবাণু ধ্বংস করে।
গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে তিত বেগুন (
Solanum torvum) ও কাটা বেগুন (S. sisymbriifolium) নামক দুটি জংলি বেগুনের প্রজাতির মধ্যে এই দুটি রোগ প্রতিরোধের খুব উচ্চমানের ক্ষমতা রয়েছে। এই দুটি জংলি বেগুনের প্রজাতি বাংলাদেশের সব জায়গায় জন্মায়। এসব জংলি বেগুন গাছের উপর কলমের মাধ্যমে বেগুন ও টমেটো গাছ তৈরি করে মাটি বাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে উচ্চফলন নিশ্চিত করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বেগুন ও আগাম টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে, আমাদের সবজি চাহিদা মিটানো যাবে এবং কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
মাটিবাহিত রোগসমূহ শনাক্ত
টমেটো ও বেগুন গাছ যে কোন বয়সেই ঢলেপড়া ও শিকড়ের গিট রোগা আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ তাপমাত্রায় (৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট) বেগুন ও টমেটোর ঢলেপড়া ও শিকড় গিট রোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। উঁচু জমি যেখানে বেগুন ও টমেটো পর্যায়ক্রমে বছরের পর বছর আবাদ করা হয় সেখানে এসব রোগ বেশি দেখা যায়। ঢলেপড়া রোগাক্রান্ত জমিতে সেচ দিলে রোগ প্রকট হয় এবং সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঢলেপড়া রোগে আক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে আংশিক ও পরে সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়ে এবং ৩-৪ দিনের মধ্যে গাছটি মারা যায়। যদি ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয় তাহলে টমেটো ও বেগুনে ফল ধরার আগেই অধিকাংশ বা সব গাছ মারা যেতে পারে। কৃমি বা নেমাটোডের আক্রমণে শিকড়ের স্থানে ফুলে গিয়ে গিট রোগের সৃষ্টি করে এবং আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গিট রোগের আক্রমণের ফলে গাছ মাটি হতে যে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে তা উপরে যেতে পারে না ফলে গাছ দুর্বল হয়ে মারা যায়। কৃমির ব্যাপক আক্রমণে গাছ প্রায়ই মারা যায়। উপরন্তু, কৃমির আক্রমণে শিকড়ে সৃষ্ট ক্ষত ঢলেপড়া রোগের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জীবাণু অনুপ্রবেশে সাহায্য করে।
জোড়কলমের উদ্দেশ্য
জোড়কলমের মাধ্যমে বেগুন ও টমেটো চাষ করলে ৯০%-৯৫% গাছ ঢলেপড়া রোগ এবং শিকড় গিট রোগ থেকে রক্ষা পায়। বেগুন ও আগাম টমেটো চাষে এই রোগ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। তাই আগাম টমেটো ও বেগুন চাষের জন্য জোড়কলম পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী ও লাভজনক। জংলী বেগুনের শিকড় সুস্থ ও সবল হওয়ায় মাটি থেকে সঠিক পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতে পারে, ফলশ্রæতিতে ফলন অনেক বেশি হয় এবং এক থেকে দেড় মাস বেশি ফলন দিয়ে থাকে। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, জোড়কলম পদ্ধতিতে বেগুন ও টমেটোর চাষ করলে ১.৫-২ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়।
জোড়কলম প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিস্তার
জোড়কলম প্রযুক্তি সর্ব প্রথম জাপানি বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেন এবং জংলী বেগুনের সাথে আবাদি বেগুন বা টমেটোর জোড়কলমের মাধ্যমে মাটিবাহিত রোগ দমনে সফলতা পান। ১৯৩০ সালে জাপানে শতকরা ৯৫ ভাগ বেগুন চাষি কলমকৃত বেগুন গাছ রোপণ করেন। জাপানি প্রকল্প ঈঠঝজঈ এর আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীগণ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে বেগুনের জোড়কলম প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ইঝগজঅট)-এ জোড়কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৮ সালে ওচগ-ঈজঝচ প্রকল্পের আওতায় বারিতে জোড়কলম পদ্ধতির মাধ্যমে বেগুন ও টমেটোর চাষাবাদ পরীক্ষা আকারে শুরু হয়। পরীক্ষাটি সাফল্যজনকভাবে সমাপ্তির পর, গাজীপুরের কাশিমপুরে কৃষকের মাঠে পরীক্ষাটি প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও যশোর জেলার নওদাগাঁও ও বাঘারপাড়ার গাইঘাট গ্রামে পরপর ৩ বছর কৃষকের মাঠে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। সমস্যার ব্যাপকতা ও কৃষকের আগ্রহের কথা বিবেচনা কর পরবর্তীতে কুমিল্লা, বগুড়া, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলায় এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করার জন্য প্রদর্শনী প্লট এবং মাঠ দিবস হয়। এর ফলে কৃষকের মধ্যে প্রযুক্তিটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আদি জোড় ও উপজোড়ের চারা উৎপাদন
যে গাছের ওপর কলম করা হয় তাকে ‘আদি জোড়’ বলে। আর যে গাছকে কলমের জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে উপজোড় বলে। জোড়কলম করার জন্য প্রথমে আদি জোড় হিসাবে কাঁটা বেগুনের বীজ বীজতলায় ফেলতে হবে। কাঁটা বেগুনের ২-৩টি পাতা বের হলে এ চারা ১৮ সেমি.ী১৩ সেমি. আকারের মাটি ভর্তি পলিথিন ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। বেশি বয়সের চারা পলিথিন ব্যাগে স্থানান্তর করলে কলম তৈরির জন্য উপযোগী হবে না। পলিথিন ব্যাগে অর্ধেক পচা গোবর ও অর্ধেক ভিটে বালুর মিশ্রণ থাকবে। টমেটো ও বেগুনের চারায় নিয়মিত পানি দিতে হবে যাতে চারা সুস্থ ও সবল থাকে। কাঁটা বেগুনের বীজ ফেলার ৭-১০ দিন পর   উপ-জোড়ের জন্য আবাদি বেগুন বা টমেটোর বীজ ফেলতে হবে। কাটা বেগুনের চারা ৪০-৫০ দিন এবং বেগুনের চারা ও টমেটোর চারা ৩০-৩৫ দিন হলে জোড়কলম করার উপযুক্ত হয়।
জোড়কলম তৈরি পদ্ধতি
কলম করা উপযোগী টমেটো বা বেগুনের চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে শিকড়ের মাটি ধুয়ে কিছুটা পানিসহ একটি পাত্রে শিকড় ডুবিয়ে রাখতে হবে যাতে চারাগুলো শুকিয়ে না যায়। জংলী বেগুনের চারার ব্যাগগুলো এনে একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এরপর, পলিথিন ব্যাগের জংলী বেগুনের চারার গোড়া থেকে ৫-৬.৫ সেমি. (২ ইঞ্চি-২.৫ ইঞ্চি) কাÐ রেখে উপরের অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে। কাÐের কাটা মাথাকে বেøডের অর্ধেক পরিমাণ ঢুকিয়ে প্রায় ১ সেমি. গভীর করে ২ ভাগে লম্বালম্বি কাটতে হবে। এরপর টমেটো বা বেগুনের চারার মাথার উপরের অংশের প্রায় ৫ সেমি. কেটে বড় পাতা ফেলে দিতে হবে কাটা অংশের নিচে দুই পাশ থেকে প্রায় ১ সেমি. লম্বা “ঠ” অক্ষরের মতো কাটতে হয়। এবার টমেটো বা বেগুনের “ঠ” এর ন্যায় মাথাটি (উপজোড়) জংলী বেগুন চারার কাটা স্থানে (আদি জোড়) ঢুকিয়ে দিতে।  পরবর্তীতে প্লাস্টিক ক্লিপ দিয়ে জোড়াটি ভালোভাবে আটকে দিতে হবে এবং গাছের উপরের অংশে ছোট হাত স্প্রে মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। জোড়ার স্থানে যেন পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কলম করার কাজ বিকাল বেলা করাই ভালো। জোড়কলম করার পর কী কী পরিচর্যা করা দরকার। কলম করা বেগুন বা টমেটো গাছ বাঁশের তৈরি ছই-এর মতো একটি গ্রাফটিং হাউজে বা ঘরে রেখে পলিথিন ও চট বা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে ঘরের ভেতরে প্রচুর আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং সূর্যের আলো সরাসরি লাগবে না, যা কলমের জোড়া লাগাতে সাহায্য করবে।  কলম করার পর ৭ দিন পর্যন্ত প্রতি দিন ৪-৫ বার স্প্রে মেশিন দিয়ে কুয়াশার ন্যায় পানি ছিটাতে হবে। বৃষ্টি না হলে রাতে ঘরের আচ্ছাদন খুলে দিতে হবে, তাতে রাতের কুয়াশায় গাছ সতেজ থাকবে। দিনের বেলায় ঘর ঢেকে রাখতে হবে নতুবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে উপজোড় শুকিয়ে যাবে। এক সপ্তাহ পর পলিথিন সরিয়ে শুধু চট বা কালো কাপড় দিয়ে ১ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে। এ সময়ে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে আচ্ছাদন খুলে দিতে হবে এবং প্রখর রোদের সময় তা ঢেকে রাখতে হবে। কলম করার ১৫-২০ দিন পর গাছ মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়। মাঠে কলমের চারা লাগানোর ৭-১০ দিন পর জংলী বেগুনের গাছের গজানো ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। চারা মাঠে লাগানোর কয়েক দিন পরে ক্লিপ খুলে নিতে হবে। একজন লোক দৈনিক ৪০০-৫০০টি জোড়কলম তৈরি করতে পারেন। উপযুক্ত পরিচর্যা করলে শতকরা ৯৫ ভাগ জোড়কলম টিকে থাকে।
ঢলেপড়া রোগ আগাম টমেটো ও বেগুন চাষে একটি বিরাট অন্তরায়। তাই জোড় কলম পদ্ধতি আগাম টমেটো এবং বেগুন চাষে একটি লাভজনক প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়া বেগুনের অন্যান্য মাটিবাহিত রোগও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং আগাম ও দীর্ঘদিন ধরে ফলনের জন্য কৃষকেরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। এই পদ্ধতি নার্সারি ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার উপকরণ হতে পারে এবং বাণিজ্যিকভাবে এই কলাকৌশলের বিস্তার ঘটানো সম্ভব এবং সফলভাবে মাটিবাহিত রোগজীবাণু দমন করা সম্ভব।য়

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বারি, জয়দেবপুর, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৫৫৬৩৬৩৯০১,   ই-মেইল : bahauddinahmed57@yahoo.com,

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon